বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: ব্রিটেনের প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের বিয়ে আজ। লন্ডনের কেনসিংটন প্যালেসের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জ চ্যাপেলে আয়োজন করা হয়েছে বিয়ের। এই বিয়ে নিয়ে যুক্তরাজ্যজুড়ে চলছে তুমুল উন্মাদনা। আর টেলিভিশনের পর্দায় বিয়ে দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন বিশ্বের লাখ-কোটি ভক্ত।
কেক থেকে ফুল, এমনকি কুশন কভারও- কতো কিছু কেনাকাটা হয় বিয়েতে। যারাই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তারাই জানেন একটি বিয়েতে চোখ কপালে ওঠার মতোও খরচ হতে পারে।
কিন্তু বিয়ে যখন রাজপরিবারের, তখন ওই বিয়েতে কতো খরচ হবে সেটা খুব আন্দাজ করা না গেলেও এটা অনুমান করা খুব একটা কঠিন কিছু নয় যে খরচটা বিশাল।
এই বিয়েতে অতিথি হয়ে সারা দুনিয়া থেকে আসবেন কতো নামী দামী আর গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তি, আছে নিরাপত্তার মতো বিষয়, একই সাথে জাঁকজমক নানা আয়োজন- সুতরাং শেষ পর্যন্ত খরচের বিলটা যে কয়েক মিলিয়নে গিয়ে ঠেকবে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ব্রিটেনের প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কলে এই বিয়ে নিয়ে হইচই চলছে- কী মিডিয়াতে, কী দোকানপাটে, রাস্তাঘাটে এবং সাধারণ মানুষের মুখে মুখে তো বটেই।
আলোচনার নানা বিষয়- বিয়ের অনুষ্ঠানটি কেমন হবে, কেমন দেখাবে বর ও কনেকে, তার সাথে আরো একটি জিনিস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে- রাজপরিবারের এই বিয়েতে কতো খরচ হতে পারে, আর এ জন্য কি সাধারণ লোকজনকে তাদের পকেট থেকে পয়সা খরচ করতে হবে? বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
নিরাপত্তা খরচ
বিয়ে হবে লন্ডনের কাছের শহর উইন্ডসরে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বিয়েকে কেন্দ্র করে এক লাখের মতো মানুষ উইন্ডসরে গিয়ে হাজির হতে পারে।
বিয়েতে যোগ দেওয়ার জন্য ৬০০ জন অতিথির কাছে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছে রাজপরিবার। আরো ২০০ অতিথি উপস্থিত থাকবেন সন্ধ্যায় নবরাজ দম্পতিকে দেওয়া রিসেপশনে।
আরো আছেন ১২০০ সাধারণ অতিথি, তারা উপস্থিত থাকবেন উইন্ডসর কাসেলের মাঠে।
এত অতিথির দেখাশোনার জন্যে প্রয়োজন বড় রকমের পরিকল্পনা। আর নিরাপত্তার খরচ তো আছেই। সম্ভবত এই খাতেই খরচ হবে সবচেয়ে বেশি।
কত খরচ হবে নিরাপত্তার পেছনে সেটা নিয়ে নানা কাগজে (সংবাদপত্র) নানা ধরনের হিসেবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব হিসেবে আসলেই কতোটা ঠিক- সেটা জানতে বিবিসির রিয়েলিটি চেক থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা হোম অফিসের সাথে। তারা বলছে, ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ স্বার্থে এই হিসাব প্রকাশ করবে না তারা।
টেমস ভ্যালি পুলিশ বলছে, ‘আমরা আপনাকে কোনো নম্বরের হিসাব দেব না, যদিও আমরা জানি যে, আপনারা এসব অঙ্কের হিসাব খুব ভালোবাসেন।’
তবে একটা হিসাব আমরা জানি সেটা হলো ডিউক এন্ড ডাচেস অফ কেমব্রিজের বিয়েতে (প্রিন্স চার্লসের বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়াম এবং ক্যাথরিন) নিরাপত্তা বাবদ মেট্রোপলিটন পুলিশ (জনগণের করের অর্থ) প্রায় ৬৪ লাখ পাউন্ড খরচ করেছিল। তথ্য অধিকার আইনে এই হিসাব প্রেস এসোসিয়েশনের কাছে প্রকাশ করা হয়েছিল।
তবে প্রিন্স হ্যারি ও মার্কলের বিয়ের সাথে উইলিয়াম ও ক্যাথরিনের বিয়ের খরচের তুলনা করা কঠিন। কারণ বিয়ের স্থান ও অতিথির সংখ্যা দুটো বিয়েতে আলাদা।
অন্যান্য খরচ
বিয়ের অনুষ্ঠান বাবদ ঠিক কতো খরচ হবে কেনসিংটন প্যালেস থেকে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এর আগে প্রিন্স উইলিয়াম এবং ক্যাথরিনের বিয়েতে কতো খরচ হয়েছে সেটা কখনো প্রকাশ করা হয়নি।
যুক্তরাজ্যে ব্রাইডবুক নামে একটি ওয়েবসাইটের হিসাব হচ্ছে- বিয়েতে খরচ হতে পারে প্রায় সোয়া তিনশো কোটি পাউন্ড, নিরাপত্তার খরচসহ।
তারা বলছে, কেকের পেছনে খরচ হবে ৫০ হাজার, ফুলের পেছনে এক লাখ ১০ হাজার, খাওয়া-দাওয়া বাবদ প্রায় তিন লাখ পাউন্ড ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই হিসাব কীভাবে করা হলো- জানতে চাইলে কোম্পানিটির প্রধান বলেছেন, বিয়ে উপলক্ষে রাজপরিবার যেসব জিনিস কেনাকাটা করেছে, সেগুলোর বাজার দর ধরে এই অর্থ হিসাব করা হয়েছে। তাতে খরচ দাঁড়িয়েছে সোয়া তিন কোটি পাউন্ড। ব্রিটেনের একটি কাগজ মেট্রো বলছে, এদেশে গড়ে একটি বিয়ের পেছনে খরচ হয় প্রায় ১৮ হাজার ডলার।
কাগজটি আরো লিখেছে, বিয়ে হবে যেখানে সেই হল ভাড়া হিসেবে খরচ হবে সাড়ে তিন লাখ পাউন্ড। খাওয়া-দাওয়ায় আরো প্রায় তিন লাখ। পানীয়ের পেছনে দুই লাখ। পোশাকে তিন লাখ। ফুলের জন্য এক লাখের বেশি। কেকের পেছনে ৫০ হাজার। গানবাজনার জন্য আরো তিন লাখ। চুল সাজানো ও মেকাপ ১০ হাজার এবং বিয়ের আংটি ৬ হাজার পাউন্ড। তবে মনে রাখতে হবে এটা কিন্তু শুধুই অনুমান।
কারণ আমরা জানি না যে যারা খাবার-দাবার, ফুল কিম্বা কেক সরবরাহ করবে তারা বড় ধরনের কোনো ডিসকাউন্ট দেবে কি না। রাজপরিবারের বিয়ে বলে কথা!
কে বহন করছে খরচ?
নিরাপত্তার পেছনে যে খরচ হবে সেটা আসবে জনগণের দেওয়া কর থেকে। আপাতত টেমস ভ্যালি পুলিশকে এই খরচ বহন করতে হবে। তবে বিয়ের পর অনুদান চেয়ে তারা আবেদন করতে পারবে হোম অফিসের কাছে।
বাদবাকি খরচ রাজপরিবারের পক্ষ থেকে।